টিউমার এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরের কোনো কোষ অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে শুরু করে এবং একটি গাঁট বা পিণ্ড তৈরি হয়। টিউমার সবসময় ক্যান্সার হয় না। অনেক সময় টিউমার নিরীহ (Benign) হয়, আবার অনেক সময় তা মারাত্মক বা ক্যান্সারজনিত (Malignant) হতে পারে।
শরীরের যেকোনো অঙ্গ বা টিস্যুতে টিউমার হতে পারে— যেমন মস্তিষ্ক, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, হাড়, ত্বক ইত্যাদি।
টিউমার কী?
“Tumor” শব্দের অর্থ হলো গাঁট বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত টিস্যু। এটি হয় যখন কোষ স্বাভাবিকভাবে ভাগ হওয়ার পরিবর্তে অস্বাভাবিকভাবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পায়।
টিউমারের প্রকারভেদ
টিউমারকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়:
১. বেনাইন টিউমার (Benign Tumor)
- এটি অ-ক্যান্সারজনিত টিউমার।
- ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।
- শরীরের অন্য স্থানে ছড়ায় না।
- সাধারণত জীবনহানিকর নয়, তবে অনেক সময় বড় হয়ে অঙ্গচাপ সৃষ্টি করতে পারে।
- উদাহরণ: লিপোমা (চর্বির গাঁট), ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড, ত্বকের ওয়ার্ট ইত্যাদি।

২. ম্যালিগন্যান্ট টিউমার (Malignant Tumor)
- এটি ক্যান্সারজনিত টিউমার।
- দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং আশেপাশের টিস্যু নষ্ট করে।
- শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে যেতে পারে (Metastasis)।
- জীবনহানিকর হতে পারে।
- উদাহরণ: ব্রেইন ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, লাং ক্যান্সার ইত্যাদি।
টিউমারের সাধারণ কারণ
টিউমার হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে, যেমন:
- জেনেটিক পরিবর্তন (DNA mutation)
- ধূমপান, অ্যালকোহল ও মাদক
- রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ (কার্সিনোজেন)
- রেডিয়েশন
- দূষণ ও পরিবেশগত কারণ
- ভাইরাস সংক্রমণ (যেমন HPV, Hepatitis B/C)
- অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন (অতিরিক্ত ফাস্টফুড, ব্যায়ামের অভাব, স্থূলতা)
- বংশগত কারণ – পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেশি।
টিউমারের লক্ষণ
টিউমারের লক্ষণ নির্ভর করে টিউমার কোথায় হয়েছে এবং এটি বেনাইন না ম্যালিগন্যান্ট তার উপর।
সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
- শরীরে নতুন গাঁট বা পিণ্ড অনুভব করা
- অস্বাভাবিক ব্যথা বা ফোলা
- হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
- দীর্ঘদিন ধরে জ্বর বা দুর্বলতা
- শরীরের কোনো অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ না করা
- ক্ষুধামন্দা
- রক্তপাত বা অস্বাভাবিক স্রাব (যেমন প্রস্রাব/পায়খানায় রক্ত)
- স্নায়বিক সমস্যা (ব্রেইন টিউমারে মাথাব্যথা, খিঁচুনি ইত্যাদি)
নির্ণয়ের উপায়
টিউমার শনাক্ত করার জন্য কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়:
- শারীরিক পরীক্ষা (Physical Examination) → ডাক্তার গাঁট পরীক্ষা করেন।
- ইমেজিং টেস্ট (Imaging Tests) → এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, আল্ট্রাসাউন্ড ইত্যাদি।
- বায়োপসি (Biopsy) → টিউমারের টিস্যু সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয় ক্যান্সার আছে কি না।
- রক্ত পরীক্ষা → কিছু ক্যান্সার মার্কার শনাক্ত করা যায়।

চিকিৎসা
টিউমারের চিকিৎসা নির্ভর করে এটি বেনাইন নাকি ম্যালিগন্যান্ট, শরীরের কোন অঙ্গে হয়েছে, এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর।
১. বেনাইন টিউমারের চিকিৎসা
- সাধারণত সার্জারি করে টিউমার অপসারণ করা হয়।
- সব ক্ষেত্রে অপারেশন লাগে না, তবে বড় হয়ে সমস্যা করলে চিকিৎসা জরুরি।
২. ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের চিকিৎসা
- সার্জারি: টিউমার অপসারণ করা।
- কেমোথেরাপি: ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে ওষুধ ব্যবহার।
- রেডিয়েশন থেরাপি: ক্যান্সার কোষ নষ্ট করতে রেডিয়েশন ব্যবহার।
- ইমিউনোথেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপি: আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি।
প্রতিরোধ
সব টিউমার প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে কিছু সচেতনতা ঝুঁকি কমাতে পারে:
- ধূমপান, অ্যালকোহল ও মাদক এড়িয়ে চলা
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (ফল, শাকসবজি, মাছ, বাদাম)
- নিয়মিত ব্যায়াম
- অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
- ক্ষতিকর রাসায়নিক ও রেডিয়েশন থেকে দূরে থাকা
- ভ্যাকসিন নেওয়া (যেমন HPV ও Hepatitis B)
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
উপসংহার
টিউমার একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, তবে সব টিউমার ক্যান্সার নয়। সঠিক সময়ে নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করলে অনেক টিউমার পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব। তাই শরীরে কোনো অস্বাভাবিক গাঁট, ব্যথা বা পরিবর্তন অনুভব করলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
👉 সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।