Sunnah Health Care

অলিগোস্পার্মিয়া (Oligospermia) কী? কারণ, লক্ষণ, পরীক্ষা ও চিকিৎসা

পুরুষ বন্ধ্যাত্বের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো অলিগোস্পার্মিয়া (Oligospermia)। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে পুরুষের বীর্যে স্বাভাবিকের চেয়ে কম সংখ্যক স্পার্ম পাওয়া যায়। সাধারণভাবে একজন সুস্থ পুরুষের বীর্যে প্রতি মিলিলিটারে কমপক্ষে ১৫ মিলিয়ন স্পার্ম থাকা উচিত। যদি এই সংখ্যা এর নিচে নেমে যায়, তবে সেটাকে অলিগোস্পার্মিয়া বলা হয়।

এই সমস্যা পুরুষের প্রজনন ক্ষমতাকে (fertility) কমিয়ে দেয় এবং অনেক সময় সন্তানধারণে বাধা সৃষ্টি করে।


অলিগোস্পার্মিয়ার প্রকারভেদ

অলিগোস্পার্মিয়াকে সাধারণত স্পার্মের সংখ্যার ভিত্তিতে তিন ভাগে ভাগ করা হয়:

  1. মাইল্ড অলিগোস্পার্মিয়া (Mild Oligospermia):
    প্রতি মিলিলিটার বীর্যে ১০-১৫ মিলিয়ন স্পার্ম থাকে।
  2. মডারেট অলিগোস্পার্মিয়া (Moderate Oligospermia):
    প্রতি মিলিলিটার বীর্যে ৫-১০ মিলিয়ন স্পার্ম থাকে।
  3. সিভিয়ার অলিগোস্পার্মিয়া (Severe Oligospermia):
    প্রতি মিলিলিটার বীর্যে ৫ মিলিয়নের কম স্পার্ম থাকে।

অলিগোস্পার্মিয়ার কারণ

অলিগোস্পার্মিয়া হওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—

  • হরমোনের অসামঞ্জস্যতা (টেস্টোস্টেরন, FSH, LH)
  • অণ্ডকোষে আঘাত বা ইনফেকশন
  • ভ্যারিকোসিল (Varicocele): অণ্ডকোষের শিরায় ফোলাভাব
  • জেনেটিক সমস্যা (Y chromosome defect)
  • অতিরিক্ত ধূমপান, অ্যালকোহল বা মাদক সেবন
  • দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস
  • অতিরিক্ত তাপের সংস্পর্শ (ল্যাপটপ কোলে রাখা, সাউনা, টাইট আন্ডারওয়্যার)
  • অপুষ্টি ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

অলিগোস্পার্মিয়ার লক্ষণ

অনেক সময় অলিগোস্পার্মিয়ার কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে:

  • যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া
  • ইরেকশনের সমস্যা
  • অণ্ডকোষে ব্যথা বা অস্বস্তি
  • বীর্যের পরিমাণ অস্বাভাবিক হওয়া
  • দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও সন্তান না হওয়া

নির্ণয়ের উপায়

অলিগোস্পার্মিয়া শনাক্ত করার জন্য সাধারণত নিচের পরীক্ষাগুলো করা হয়:

  • সিমেন অ্যানালাইসিস (Semen Analysis): বীর্যের নমুনা পরীক্ষা করে স্পার্মের সংখ্যা ও গুণমান যাচাই করা হয়।
  • হরমোন টেস্ট: টেস্টোস্টেরন, FSH, LH ইত্যাদি দেখা হয়।
  • আল্ট্রাসাউন্ড বা স্ক্যান: অণ্ডকোষ বা বীর্যনালীতে কোনো সমস্যা আছে কি না দেখা হয়।
  • জেনেটিক টেস্ট: ক্রোমোজোমের সমস্যা চেক করার জন্য।

চিকিৎসা

অলিগোস্পার্মিয়ার চিকিৎসা নির্ভর করে এর মূল কারণের উপর।

  1. ঔষধ ও হরমোন থেরাপি:
    হরমোনের অসামঞ্জস্যতা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ বা হরমোন থেরাপি দেওয়া হয়। বিশেষ করে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা।
  2. সার্জারি:
    ভ্যারিকোসিল বা বীর্যনালীতে ব্লক থাকলে সার্জারি করা হয়।
  3. সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তি (ART):
    IVF (In Vitro Fertilization), ICSI (Intracytoplasmic Sperm Injection) এর মাধ্যমে সন্তানধারণ সম্ভব।
  4. লাইফস্টাইল পরিবর্তন:
    • ধূমপান, অ্যালকোহল ও মাদক ত্যাগ
    • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (ডিম, মাছ, বাদাম, সবজি, ফল)
    • নিয়মিত ব্যায়াম
    • পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ কমানো

প্রতিরোধ

  • টাইট আন্ডারওয়্যার না পরা
  • ল্যাপটপ কোলে রাখা এড়িয়ে চলা
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
  • যৌন রোগ প্রতিরোধ করা
  • রাসায়নিক ও রেডিয়েশনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা

উপসংহার

অলিগোস্পার্মিয়া পুরুষদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য সমস্যা — সঠিক চিকিৎসা, জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান লাভের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

👉 তাই যদি দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও সন্তান না হয়, তবে দেরি না করে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *