Sunnah Health Care

এজোস্পার্মিয়া (Azoospermia) কী? কারণ, লক্ষণ, পরীক্ষা ও চিকিৎসা

পুরুষের বন্ধ্যাত্বের সবচেয়ে বড় ও জটিল সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো এজোস্পার্মিয়া (Azoospermia)। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে পুরুষের বীর্যে (semen) কোনো স্পার্ম পাওয়া যায় না। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ১০-১৫% পুরুষ বন্ধ্যাত্ব সমস্যার মধ্যে ভোগেন এবং তাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশের কারণ হলো এজোস্পার্মিয়া।

এই সমস্যাটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও চিকিৎসা জানা অত্যন্ত জরুরি, কারণ অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব।

এজোস্পার্মিয়া কী?

এজোস্পার্মিয়া (Azoospermia) হলো এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যেখানে পুরুষের বীর্যে কোনো স্পার্ম থাকে না। এটি পুরুষ বন্ধ্যাত্বের একটি প্রধান কারণ। সাধারণভাবে একটি সুস্থ পুরুষের বীর্যে প্রতি মিলিলিটারে ১৫ মিলিয়নের বেশি স্পার্ম থাকার কথা, কিন্তু এজোস্পার্মিয়াতে সেই সংখ্যা শূন্য থাকে।

এজোস্পার্মিয়ার প্রকারভেদ

মূলত দুই ধরনের এজোস্পার্মিয়া হয়ে থাকে:

  1. অবস্ট্রাক্টিভ এজোস্পার্মিয়া (Obstructive Azoospermia)
    • এখানে টেস্টিসে স্পার্ম উৎপাদন হয়, কিন্তু বীর্যনালীতে কোনো ব্লকেজ বা বাধা থাকার কারণে স্পার্ম বাইরে আসতে পারে না।
    • সাধারণত নালি ব্লক, ভ্যাসেকটমি, ইনফেকশন বা আঘাতের কারণে হয়ে থাকে।
  2. নন-অবস্ট্রাক্টিভ এজোস্পার্মিয়া (Non-obstructive Azoospermia)
    • এখানে টেস্টিসে স্পার্ম উৎপাদনই হয় না, বা খুব কম হয়।
    • এর কারণ হতে পারে জেনেটিক সমস্যা, হরমোনের অসামঞ্জস্যতা, টেস্টিসের ক্ষতি ইত্যাদি।

এজোস্পার্মিয়ার সাধারণ কারণ

  • হরমোনের অসামঞ্জস্যতা (টেস্টোস্টেরন, FSH, LH-এর সমস্যা)
  • জেনেটিক সমস্যা (Klinefelter syndrome, Y chromosome microdeletion)
  • শিশুকালে অণ্ডকোষ না নামা (Undescended testis)
  • ইনফেকশন বা যৌন রোগ
  • অতিরিক্ত তাপ, রেডিয়েশন বা রাসায়নিকের সংস্পর্শ
  • ধূমপান, অ্যালকোহল বা মাদক সেবন
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও অপুষ্টি

লক্ষণ বা উপসর্গ

এজোস্পার্মিয়া সাধারণত কোনো দৃশ্যমান উপসর্গ তৈরি করে না। অনেক পুরুষ বিয়ের পর সন্তান না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি টের পান না। তবে কিছু ক্ষেত্রে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে:

  • যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া
  • অণ্ডকোষ ছোট বা শক্ত হয়ে যাওয়া
  • যৌন অক্ষমতা বা ইরেকশনের সমস্যা
  • বীর্যের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কম হওয়া

নির্ণয়ের উপায়

এজোস্পার্মিয়া নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষা করা হয়:

  • সিমেন অ্যানালাইসিস (Semen Analysis): বীর্যের নমুনা পরীক্ষা করে স্পার্মের সংখ্যা ও মান দেখা হয়।
  • হরমোন টেস্ট: টেস্টোস্টেরন, FSH, LH ইত্যাদি চেক করা হয়।
  • আল্ট্রাসাউন্ড বা স্ক্যান: অণ্ডকোষ ও বীর্যনালীতে কোনো ব্লকেজ আছে কি না দেখা হয়।
  • বায়োপসি (Testicular Biopsy): টেস্টিস থেকে টিস্যু নিয়ে স্পার্ম উৎপাদন হচ্ছে কি না যাচাই করা হয়।

চিকিৎসা

এজোস্পার্মিয়ার চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণের উপর:

  • অবস্ট্রাক্টিভ এজোস্পার্মিয়া
    • সার্জারির মাধ্যমে ব্লকেজ দূর করা যায়।
    • অনেক ক্ষেত্রে টেস্টিস থেকে সরাসরি স্পার্ম সংগ্রহ করে IVF বা ICSI-র মাধ্যমে সন্তান লাভ সম্ভব।
  • নন-অবস্ট্রাক্টিভ এজোস্পার্মিয়া
    • হরমোন থেরাপি
    • বিশেষ ওষুধ (হোমিওপ্যাথি)
    • কখনো কখনো মাইক্রো-সার্জারি করে টেস্টিস থেকে স্পার্ম সংগ্রহ করা হয়।
  • লাইফস্টাইল পরিবর্তন
    • ধূমপান, মাদক, অ্যালকোহল ত্যাগ
    • স্বাস্থ্যকর খাবার (ডিম, বাদাম, মাছ, শাকসবজি, ফল) খাওয়া
    • নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম

প্রতিরোধ

  • সঠিক বয়সে বিয়ে ও সন্তান পরিকল্পনা
  • যৌন রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা
  • রাসায়নিক ও রেডিয়েশনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা
  • অতিরিক্ত তাপ (সাউনা, ল্যাপটপ কোলে রাখা, টাইট আন্ডারওয়্যার) এড়িয়ে চলা

উপসংহার

এজোস্পার্মিয়া একটি গুরুতর স্বাস্থ্যসমস্যা হলেও হোমিওপ্যাথী চিকিৎসায় এর সমাধান সম্ভব। সময়মতো পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে অনেক পুরুষই সন্তান লাভ করতে সক্ষম হন।

👉 তাই যদি দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেও সন্তান না হয়, তবে দেরি না করে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *